এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সোমবার, ৩০ মে, ২০২২

একজন পথশিশুর আত্মকথা



"একজন পথশিশুর আত্মকথা"


জন্ম আমার গরীর ঘরে।

যখন একদম ছোট ছিলাম, বুঝার মতো বয়স হয়নি,

জানিনা বাবা মা কতটা বিলাসিতা বা কষ্টে রেখেছে। 

যখন একটু বড় হলাম, একটু একটু বুঝতে শিখলাম, 

তখন থেকেই শুরু হলো আমার ত্যাগী জীবন। 

আমার বয়সী কতো বাচ্চা দেখেছি মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতে।

আমার কখনো মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।

বাবা দিনমজুর, মা করে পরের বাড়ি কাজ।

কে ধরবে আমার হাত, আর কেই-বা আমায় নিয়ে যাবে স্কুলে!

দুয়েক দিন যদিও পাড়ার অন্য বাচ্চাদের দলে যোগ দিয়ে স্কুলে গিয়েছি,

তবুও আমার শেখা হয়নাই নিজের নামটা লেখা।

বড়লোকদের বাচ্চাদের দেখেছি গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ানো, 

আর নানা রকমের খাওয়া-দাওয়া। 

গরীব বলে গাড়ির কাঁচও কখনো হয়নি ছুঁয়ে দেখা,

আর হয়নি ঐ খাবার গুলোর নাম গুলোও জানা।


একটা সময় মা হারালো, বাবাও হারালো।

ভবে হলাম জনম জনমের এতিম। 

স্বার্থপর এই দুনিয়ায় আপন বলতে কেউ রইলোনা।

পাশে এসে কেউ দাড়ালো না সহায় সম্বলহীন এই অসহায়ের। 

কতো দিনের দিনের পর দিন না খেয়ে কাটিয়েছি সে খবরও কেউ রাখেনি। 

চারিদিকে হতাশা যেন ঘিরে রেখেছিল আমাকে।

জীবনের কোন উদ্দেশ্য ছিল না।

চারিদিকে যেন হাহাকার।

ক্ষুধা  আর পানি পিপাসা বুক ফাটিয়ে করে দিতো চৌচির। 

ভাবতাম সৃষ্টিকর্তা কেন এত কষ্ট দেয় আমায়।

খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে কতবার যে চুরি করেছি,

আর কতবার যে ধরা পড়ে মার খেয়েছি সে হিসেব রাখিনি।

এভাবে চলতে চলতেই শৈশব কাটিয়ে কৈশোরে পা রেখেছি।

চারিদিকে হন্য হয়ে খুজেছি কাজ।

কত অবহেলা লাঞ্ছনা সহ্য করে করেছি মানুষের কাছে।

যে বয়সে যে কাজ করা সম্ভব নয়, 

জীবিকার তাগিদে সে কাজ করেছি জীবন বাজি রেখে। 

কোথাও পাইনি আমার উপযুক্ত কাজের মূল্য।

কোথাও অর্ধেক আর কোথাও একেবারেই পাইনি,

এভাবেই কাটিয়ে দিয়েছি পুরো কৈশোর। 


আমার বয়সী ছেলে মেয়েরা কত সুন্দর স্কুল ড্রেস পড়ে আমার সামনে দিয়ে যেতো। 

আমার মনও তখন ছটফট করতো স্কুলে যাওয়ার জন্য। 

মাঝে মাঝে খুব বেশি কষ্ট হলে কাজ ফাঁকি দিয়ে স্কুলের সামনে গিয়ে বসে থাকতাম। 

চোখের কোণে জল জমা হতো স্কুলে যেতে না পারার বেদনায়।

অনেক রাগ হতো সৃষ্টিকর্তার উপর।

চিৎকার করে বলতাম, 

হে খোদা, কেন গরীব করে পাঠালে আমায় এ ধরায়।


এভাবেই চলছে জীবন।

জানিনা আর কতদিন এভাবে চলবে,

দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য জীবন সংগ্রাম। 

তবুও বেঁচে আছি এই আশায়, 

হয়তো কোনদিন ঐ সৃষ্টিকর্তা করে দিবেন তিনবেলা পেটপুরে 

খাওয়ার কোন ব্যাবস্থা।

হ্যা ভাই, আমরা পথ শিশু,

কিন্তু আমরাও মানুষ। 

আপনি আমি একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট মানুষ। 


বিঃদ্রঃ- আসুন না ভাই এই ঈদে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী এই পথশিশুদের পাশে দাড়াই।

খুশী গুলো ভাগ করে নেই এই অসহায়দের সাথে। 

ওরাও তো আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ। 


✍️ লতিফুর রহমান পলাশ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন